বিশ্বের দুটি অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র, তাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় কিছু বিস্ময়কর তফাত প্রদর্শন করে। ভোট দেয়ার পদ্ধতিতে এই দুই দেশের পার্থক্য কেবল সাংবিধানিক ও আইনি সীমিত নয়, বরং নির্বাচনী ব্যবস্থা, ভোটার নিবন্ধন, এবং ভোট গণনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা দেখা যায়।
বিষয়বস্তু
১. ভোটদান পদ্ধতি
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের জন্য সাধারণত প্রথম অতীতের পোস্ট সিস্টেম ব্যবহৃত হয়, যেখানে সর্বোচ্চ ভোট প্রার্থী নির্বাচিত হয়। তবে, বিভিন্ন রাজ্যে ইনস্ট্যান্ট-রানফো ভোটিং ব্যবহার করা হয়, যা ভোটারদের প্রার্থীদের র্যাংকিং করার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের ভোটদানে এমন কোনো র্যাংকিং সিস্টেম নেই; এখানে সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হয়।
২. নির্বাচন পরিচালনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন পরিচালনা হয় তিন স্তরে—ফেডারেল, রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয়। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন শুধুমাত্র জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সংসদ সদস্য নির্বাচনে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
৩. ভোটার নিবন্ধন
যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্যেই ভোটারের নিবন্ধন প্রাক-নির্বাচনী ব্যবস্থা হিসেবে চলে, এবং ভোটারদের বিভিন্ন সামাজিক সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হয়। বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়াটি অনেকটাই সরল; ভোটার তালিকায় নাম উঠানোর জন্য সাধারণত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
৪. ভোটার যোগ্যতা
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটার হওয়া জন্য নাগরিক হতে হবে এবং বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর। কিছু রাজ্যে ভোটারের যোগ্যতার ব্যাপারে অস্থায়ী বিধিনিষেধও থাকতে পারে, যেমন ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার সীমাবদ্ধ হতে পারে। বাংলাদেশেও একই বয়সের সীমা রয়েছে তবে এখানে ভোটারের যোগ্যতার ক্ষেত্রে আইনত কোনো ফৌজদারি নিষেধাজ্ঞা নেই।
৫. অনুপস্থিত ভোট (Absentee Voting)
যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে মার্কিন নাগরিকদের জন্য অ্যাবসেন্টি ভোটিং ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। যারা নির্বাচনী দিনে ভোট দিতে পারেন না, তারা প্রাক-বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভোট দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে সাধারণত এ ধরনের প্রক্রিয়া নেই, তবে কিছু পরিস্থিতিতে অনুপস্থিত ভোটারের জন্য ব্যালট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
৬. ভোটের প্রযুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু রাজ্যে অপটিক্যাল স্ক্যান বা ডিজিটাল ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে ভোট দ্রুত গণনা করা হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় যদিও ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার শুরু হয়েছে, তবে এখনও বেশিরভাগ এলাকায় কাগজের ব্যালট পেপারেই ভোট গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভোট দেয়ার পদ্ধতি একে অপরের থেকে অনেকটা ভিন্ন। একটি দেশের নির্বাচনী সিস্টেম যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সেখানে অন্যটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে। তবে, প্রতিটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা তার নিজস্ব রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠে।