বাংলাদেশে প্রতিদিনের খাবারে কলা খুবই পরিচিত একটি ফল। এর সহজলভ্যতা, স্বাস্থ্যগুণ, আর সঠিক পুষ্টিগুণের কারণে অনেকেই প্রতিদিন কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রশ্ন আসে, প্রতিদিন কলা খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর? কলা খেলে কী কী উপকার পাওয়া যায় আর কী কী অপকার হতে পারে? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
১. কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
অনেকেই মনে করেন কলা খেলে ওজন বাড়ে, তবে এটি পুরোপুরি সত্য নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় মাত্র ৮০-৯০ ক্যালোরি এবং খুবই কম পরিমাণ ফ্যাট থাকে। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং প্রোটিন আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তৃপ্তি দেয়। তাই এটি খাবারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
২. কলা খেলে কি প্রেসার বাড়ে
কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কলা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে, কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
৩. দ্রুত এনার্জি দেয়
কলায় প্রাকৃতিক শর্করা যেমন ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ, এবং সুক্রোজ থাকে, যা শরীরকে দ্রুত এনার্জি প্রদান করে। এটি বিশেষত অ্যাথলেট এবং খেলোয়াড়দের জন্য বেশ উপকারী, কারণ এটি শরীরকে প্রয়োজনীয় এনার্জি দেয় এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
৪. পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী
কলায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
৫. মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক
কলায় ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়ায়। সেরোটোনিন আমাদের মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এবং মেজাজ উন্নত করে। কলা খেলে মানসিক চাপ কমতে পারে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৬. কলা খেলে কি বীর্য বাড়ে
কলাতে বোমেনাইল নামক একটি উৎসেচক আছে যা পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক। এটি শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করতে পারে এবং যৌন স্বাস্থ্যে উন্নতি সাধন করে।
কলা খাওয়ার সম্ভাব্য অপকারিতা
১. কলা খেলে কি গ্যাস হয়
অনেকেই কলা খেলে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন। এটি মূলত বেশি পাকা কলা খাওয়ার ফলে হতে পারে। যাদের হজমে সমস্যা আছে, তাদের কাঁচা বা কম পাকা কলা খাওয়া বেশি সুবিধাজনক হতে পারে।
২. কলা খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
কলায় প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বিপজ্জনক হতে পারে, তাই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
৩. কলা খেলে কি ঠান্ডা লাগে
কিছু মানুষের মধ্যে কলা খাওয়ার পর ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমা, হাঁচি, বা নাকে পানি ঝরার সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে কলা খাওয়ার পর সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলে কলা না খাওয়াই ভালো।
৪. অতিরিক্ত কলা খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে
যেকোনো খাবারের মতো অতিরিক্ত কলা খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে থাকা উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম অতিরিক্ত গ্রহণ করলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। প্রতিদিন ১-২ টি কলা খাওয়া যথেষ্ট এবং নিরাপদ।
৫. কলা খেলে কি কৃমি হয়
কলা খাওয়ার সময় অনেকেই কৃমির সমস্যার শিকার হন। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। কলার খোসা ভালোমতো ধুয়ে এবং দু’প্রান্ত কেটে খেলে কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সঠিক পুষ্টিগুণ এবং সহজলভ্যতার জন্য কলা প্রতিদিনের খাবারে একটি আদর্শ ফল হতে পারে। তবে ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত অবস্থা, যেমন- ডায়াবেটিস, অ্যালার্জি বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত। এর উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম এবং ফাইবার হার্ট, হজম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবুও অতিরিক্ত খেলে এটি শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন ১-২ টি কলা খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা যায়।