আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন নিয়ে চমকপ্রদ অজানা তথ্য!

Abdul Hamid Khan Bhashani

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, যিনি “মজলুম জননেতা” নামে খ্যাত, ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার জীবন সংগ্রাম ও রাজনৈতিক ভূমিকা বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষার অগ্রযাত্রা

  1. জন্ম শৈশব:
    ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার সয়াধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
  2. পিতৃ-মাতৃহীন শৈশব:
    অল্প বয়সেই পিতা-মাতাকে হারিয়ে চাচার তত্ত্বাবধানে বড় হন।
  3. শিক্ষার প্রতি মনোযোগ:
    দেওবন্দে দুই বছর ইসলামী শিক্ষা লাভ করেন এবং চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও শিক্ষার প্রতি নিষ্ঠা বজায় রাখেন।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা

  1. প্রথম আন্দোলন:
    ১৯০৭ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন।
  2. কংগ্রেসে যোগদান:
    ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
  3. প্রথম কারাবাস:
    ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য ১০ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন।

কৃষক ও প্রজাদের নেতা

  1. কৃষক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা:
    ১৯২৬ সালে আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূচনা করেন।
  2. ভাসানী” নামের উৎপত্তি:
    আসামের ব্রহ্মপুত্র নদের “ভাসান চরে” কৃষক সম্মেলন আয়োজনের কারণে তাকে “ভাসানীর মাওলানা” নামে ডাকা হয়।

রাজনৈতিক বিপ্লব ও নেতৃত্ব

  1. আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা:
    ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়।
  2. কাগমারী সম্মেলন:
    ১৯৫৭ সালের এই সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রথম সরব হন।
  3. ন্যাপ গঠন:
    ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা বামপন্থী রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেয়।

ভাষা আন্দোলন ও ভূমিকা

  1. রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি:
    ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
  2. ভুখা মিছিল:
    খাদ্যাভাবের প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালে ঢাকায় ভুখা মিছিলের আয়োজন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

  1. স্বাধীনতার জন্য আহ্বান:
    ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার আহ্বান জানান।
  2. পাকিস্তান বাহিনীর প্রতিরোধ:
    পাক বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারত চলে যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন।
  3. বিশ্বজনমত গঠন:
    বাংলাদেশের গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি বার্তা প্রেরণ করেন।

মৃত্যুবরণ

  1. মৃত্যু শেষজীবন:
    ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি নেতা মৃত্যুবরণ করেন।

মাওলানা ভাসানীর অবদান ও শিক্ষা

  • গণমানুষের নেতা:
    মাওলানা ভাসানী কৃষক, শ্রমিক ও প্রজাদের অধিকার রক্ষার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
  • বাঙালির স্বাধীনতা:
    তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখেন।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন কেবল একটি ব্যক্তির সংগ্রাম নয়, বরং এটি একটি জাতির মুক্তির প্রতিচ্ছবি। তার জীবন ও সংগ্রাম আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top