শীতকালে শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষায় কিছু বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। এসময় তাপমাত্রা হ্রাসের কারণে শিশুরা সহজেই ঠান্ডা, সর্দি, এবং ত্বকের শুষ্কতার সমস্যায় ভুগে থাকে। বিশেষ করে নবজাতকদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া জরুরি, কারণ তাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকে। নিচে শিশুদের শীতে সুস্থ রাখার জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
বিষয়বস্তু
নবজাতকের ক্ষেত্রে শীতকালীন যত্ন
নবজাতক থেকে ৪০ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে মায়েদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়:
উষ্ণ পোশাক পরানো: নবজাতককে উষ্ণ রাখতে সুতির কাপড় পরানোর পর কাঁথা দিয়ে মোড়ানো উচিত। ঘরের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে সোয়েটার পরানো যেতে পারে।
মায়ের সান্নিধ্যে রাখা: শিশুকে দোলনায় বা আলাদা করে না শুইয়ে মায়ের কোল ঘেঁষে শোয়ানো ভালো। এতে উষ্ণতা বজায় থাকবে এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধা হবে।
বুকের দুধ খাওয়ানো: বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে যা শিশুকে শীতের সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করে। এটি শিশুর শরীর উষ্ণ রাখতেও সহায়ক।
বাইরের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখা: নবজাতককে শীতে বাইরে না নেওয়াই ভালো। যদি রোদে রাখতে হয়, তবে জানালার পাশে বসিয়ে মিষ্টি রোদ পেতে দিন।
এক মাস থেকে এক বছরের শিশুদের জন্য শীতকালীন যত্ন
এই বয়সে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তাই সঠিক যত্নের প্রয়োজন:
গোসলের নিয়ম: এক থেকে দুই দিন পর পর ঈষদুষ্ণ পানিতে শিশুর গোসল করান। গোসলের পরে ত্বকে বেবি লোশন লাগান যেন ত্বক শুষ্ক না হয়।
বুকের দুধ ও শক্ত খাবার: ছয় মাসের বেশি বয়স হলে বুকের দুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দিন, যেমন খিচুড়ি, ডিম, শাকসবজি। এগুলি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
উষ্ণ কাপড় ও মোজা পরানো: শিশুকে সবসময় হাতমোজা, পা-মোজা ও কানটুপি পরিয়ে রাখুন। এতে শীতে শরীর উষ্ণ থাকবে। তবে খুব ভারী বা অতিরিক্ত গরম কাপড় পরানো থেকে বিরত থাকুন।
এক থেকে ছয় বছরের শিশুদের শীতকালীন যত্ন
এক থেকে ছয় বছরের শিশুদের জন্য শীতকালে কিছু বাড়তি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন, কারণ এ বয়সে শিশুরা অনেক দৌড়াদৌড়ি করে, ফলে অতিরিক্ত গরম কাপড় প্রয়োজন হয় না।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: শীতকালে শিশুদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই নিয়মিত বেবি লোশন লাগিয়ে ত্বক ময়েশ্চারাইজ রাখুন। এছাড়া শিশুর হাত ও মুখ ধোয়া নিশ্চিত করুন।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো: এই সময়ে শীতকালীন সবজি এবং ফল যেমন গাজর, বিট, এবং টমেটো খাওয়াতে পারেন। এগুলো ত্বকের জন্য উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।
বাইরের ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখা: শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি পান ও ব্যবহার করানো উচিত। অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার না খাওয়ানো এবং খুব শীতল পরিবেশে শিশুদের না রাখা প্রয়োজন।
সাধারণ কিছু পরামর্শ
বেবি অয়েল ও ভ্যাসলিন ব্যবহার: শিশুর ত্বকে শীতের শুষ্কতা এড়াতে দিনে দুই থেকে তিনবার বেবি অয়েল বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করা ভালো।
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার: শুষ্ক পরিবেশের কারণে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে ঘরের আর্দ্রতা বজায় থাকবে, যা শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ভালো।
শীতে শিশুর সঠিক যত্নে সহজেই তাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখা সম্ভব। এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করে শিশুদের সুস্থ ও উষ্ণ রাখুন এবং শীতে রোগমুক্ত একটি আনন্দময় সময় উপহার দিন।