মমতাজ বেগম, বাংলা লোকগানের কিংবদন্তি শিল্পী, শুধু তার সংগীতের জন্যই নয়, রাজনৈতিক জীবনের জন্যও পরিচিত। তবে তার জীবনের অদেখা অধ্যায় এবং কিছু গোপন তথ্য রয়েছে যা আজও অনেকের অজানা। চলুন জানি মমতাজ বেগমের কিছু রহস্যময় গল্প এবং তার জীবনযাত্রার অজানা দিক।
প্রাথমিক জীবন
মমতাজ বেগম ১৯৭৪ সালের ৫ মে, মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মধু বয়াতি ছিলেন একজন বাউল শিল্পী এবং মা উজালা বেগম একজন গৃহিনী। সংগীতের প্রতি তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই ছিল। মমতাজের শৈশব কেটেছিল বাবা মধু বয়াতির কাছ থেকে গানের পাঠ নিয়ে। পরে লোকগানের শিক্ষক আবদুর রশীদ সরকারের কাছে গানের শিক্ষা নেন, যিনি তার জীবনসঙ্গীও হয়ে ওঠেন।
সংগীত জীবন
মমতাজ বেগম তার ৪০ বছরের সংগীত জীবনে ৭০০-এর বেশি গান রেকর্ড করেছেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে তিনি দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেছেন। তার গান বাংলা লোকগান এবং বাংলা নববর্ষের মেলায় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। মমতাজের গানগুলো যেন এক নতুন প্রাণ তুলে ধরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।
রাজনৈতিক জীবন
মমতাজ বেগম শুধুমাত্র একজন গায়িকা নন, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার উপস্থিতি ছিল। ২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
ব্যক্তিগত জীবন
মমতাজ বেগমের ব্যক্তিগত জীবনও অনেকটা আলোচিত। তার প্রথম স্বামী আবদুর রশীদ সরকার, যিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে তিনি মোহাম্মদ রমজান আলীকে বিয়ে করেন, কিন্তু তাদের সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটে। অবশেষে মমতাজ বেগম মঈনউদ্দিন হাসান চঞ্চলকে বিয়ে করেন। তার এক ছেলে রয়েছে, মেহেদী খান, এবং তিনি তার পুত্রবধূ চৈতি দেওয়ানের সাথে সুখী জীবন কাটাচ্ছেন।
বিতর্ক এবং সমালোচনা
মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে কিছু বিতর্কও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারবার ভারতীয় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে এক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও তা না হওয়ায় মামলা হয়। এছাড়া ২০২১ সালে তিনি একটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন, কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে, এটি একটি ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদান করা হয়েছিল।
পুরস্কার ও সম্মান
মমতাজ বেগম তার সংগীত জীবনে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী (নারী) হিসেবে আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন, যা তার সংগীত কর্মজীবনের উজ্জ্বল মুহূর্ত।
মমতাজ বেগমের জীবনে নানা রহস্য এবং গোপন তথ্য রয়েছে যা তার সংগীত ক্যারিয়ার এবং রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে এক অনন্য মিলন ঘটিয়েছে। তার জীবনের উত্থান-পতন এবং বিভিন্ন বিতর্কের পরেও তিনি আজও বাংলার সংগীত জগতের একজন অমূল্য রত্ন।