মাওলানা সাদ কান্ধলভী, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের একজন বিশিষ্ট আলেম, যিনি তাবলীগ জামাতে নেতৃত্ব দেন। তার নামটি মুসলিম বিশ্বজুড়ে বিশেষভাবে আলোচিত এবং একইসাথে বিতর্কিত। নানা ধর্মীয় মন্তব্য এবং তাবলীগের প্রতি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তাকে তাবলীগ জামাতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রভাবশালী ও বিতর্কিত করেছে। আসুন দেখি কেন মাওলানা সাদ এত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
মাওলানা সাদ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- তাবলীগ জামাতের ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্ম:
- মাওলানা সাদের দাদা মাওলানা ইলিয়াস শাহ (রাহ.) তাবলীগের প্রবর্তক ছিলেন।
- তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে তাবলীগ জামাতের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
- তাবলীগের নেতৃত্বে আসা এবং নিজের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি:
- মাওলানা সাদ দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তাবলীগের নেতৃত্বে রয়েছেন।
- তার নেতৃত্বে তাবলীগে নতুন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে যা বেশিরভাগ আলেমের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করেছে।
- কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং তাবলীগে বিভক্তি:
- কোরআন ও হাদিসের কিছু বিষয়ে মাওলানা সাদের ব্যাখ্যা এবং মন্তব্য অনেক আলেমের কাছে আপত্তিকর।
- তাবলীগ জামাতে দুটি প্রধান পক্ষে বিভক্তি দেখা দেয়—এক পক্ষ তাকে সমর্থন করে, অন্য পক্ষ বিরোধী।
- মুসলিম বিশ্বে আলেমদের প্রতিক্রিয়া এবং দেওবন্দের ফতোয়া:
- ভারতীয় দারুল উলুম দেওবন্দ তার কিছু বক্তব্যের ওপর ফতোয়া জারি করেছে।
- দেওবন্দ ফতোয়ায় উল্লেখ করেছে যে, তার কিছু মন্তব্য কুরআন ও হাদিসের মূল শিক্ষার বিরোধী।
- তারা তাবলীগ জামাতের সদস্যদের তাকে সতর্কভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
- আন্তর্জাতিক আলেমদের প্রতিক্রিয়া এবং বিতর্কিত বক্তব্য:
- বিভিন্ন দেশের আলেমগণ তার কিছু মন্তব্যকে ইসলামবিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছেন।
- বাংলাদেশের আলেমসমাজও তাকে বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্যের জন্য সমালোচনা করেছে।
- তাবলীগের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও প্রতিক্রিয়া:
- বাংলাদেশের ইজতেমায় তাকে আনার বিষয়ে তাবলীগের একাংশ তীব্র বিরোধিতা করেছে।
- তার আসা নিয়ে সংঘর্ষও ঘটেছে যা তাবলীগের ঐক্যকে ব্যাহত করেছে।
- তাবলীগের মূলনীতির ব্যাখ্যার প্রতি নিজের অবস্থান:
- মাওলানা সাদ তাবলীগের কার্যক্রমে “খুরুজ” বা দাওয়াতের গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যা তাওবার অপরিহার্য শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
- এই ব্যাখ্যা বেশিরভাগ আলেমের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলেনি।
মাওলানা সাদের বিতর্কিত কিছু মন্তব্য
- ভোটদান নিষেধাজ্ঞা:
- মাওলানা সাদের মতে, ভোটের সময় আঙুলে লাগানো রঙ নামাজে বাধা সৃষ্টি করে, তাই ভোট দেওয়া উচিত নয়।
- কোরআনের নতুন ব্যাখ্যা:
- তিনি দাবি করেন, তার কিছু ব্যাখ্যা মুফাসসিরদের প্রচলিত মত থেকে ভিন্ন এবং এটি গ্রহণযোগ্য।
- মোবাইলের ক্যামেরা নিষিদ্ধ:
- তার মতে, ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম এবং নামাজে এই মোবাইল বাধা হতে পারে।
- পারিশ্রমিক গ্রহণ নিয়ে বিতর্ক:
- কোরআন শেখানোর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়াকে তিনি হারাম হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ব্যভিচারীদের তুলনায় এদের বিচার কঠোর হবে বলে উল্লেখ করেন।
- মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক:
- মাওলানা সাদ বলেছেন, ধর্মীয় শিক্ষার মূল কেন্দ্র মসজিদ হওয়া উচিত, যেখানে দ্বীন শিখানো হয়।
- তাবলীগের প্রয়োজনীয়তা এবং তাওবার শর্ত:
- তিনি বলেন, তাওবার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো তাবলীগের কাজে বের হওয়া, যা আলেমদের ঐক্যমত্যের বিরুদ্ধে।
- কোরআন ও তাফসির সম্পর্কে মন্তব্য:
- মাওলানা সাদ কোরআন অনুবাদসহ পড়া বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করেছেন, যা প্রচলিত শিক্ষার থেকে ভিন্ন।
মাওলানা সাদ কান্ধলভী তাবলীগ জামাতের একজন বিশেষ পরিচিত আলেম হলেও তার বিভিন্ন মন্তব্য এবং ব্যাখ্যার কারণে বিশ্বজুড়ে মুসলিম আলেমদের মাঝে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তাবলীগ জামাতের ঐক্যকে নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছেন তিনি।