ঋতুপর্ণা চাকমা—বাংলাদেশের নারী ফুটবলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। রাঙামাটির কাউখালী থেকে উঠে আসা এই প্রতিভাবান খেলোয়াড় ফুটবল মাঠে নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের মাধ্যমে। তার ফুটবল যাত্রা কেবল বাংলাদেশের নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস।
বিষয়বস্তু
ফুটবলে যাত্রার সূচনা
ঋতুপর্ণার ফুটবল খেলার শুরু হয় ২০১২ সালে, যখন তিনি মাত্র তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের “বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ” প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তার ফুটবল যাত্রা শুরু হয়। যদিও প্রথমে তিনি মেয়েদের ফুটবল সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না, ধীরে ধীরে ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা গড়ে ওঠে।
পরিবার ও সংগ্রামের গল্প
ঋতুপর্ণার পরিবার ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। তার বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর কৃষক, যিনি ২০১৫ সালে মারা যান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু তার জেঠা, বীর সেন চাকমার উৎসাহ এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ভর্তি হন। তার দিদি, যিনি একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন, তার শিক্ষার খরচ বহন করতেন। এমনকি বিকেএসপির বেতন দিতে দিদি তার সোনা বিক্রি করেছিলেন।
জাতীয় দলে অভিষেক ও সাফল্য
২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে যাত্রা শুরু করেন ঋতুপর্ণা। ২০১৯ সালে মায়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্বে সিনিয়র দলে অভিষেক ঘটে। এরপর ২০২২ সালের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলকে ঐতিহাসিক বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ঐ টুর্নামেন্টে তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাকে দলের অপরিহার্য খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন
ঋতুপর্ণা শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, এশিয়া ও ইউরোপের ফুটবল লিগেও জায়গা করে নিতে চান। ইতোমধ্যে তিনি ইউরোপে খেলার প্রস্তাব পেয়েছেন, যা তার ফুটবল জীবনের জন্য বড় সুযোগ। তার প্রিয় খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, যিনি তাকে কঠোর পরিশ্রমের অনুপ্রেরণা দেন।
ঋতুপর্ণার ফুটবল দৃষ্টিভঙ্গি
পাহাড়ি পরিবেশে বড় হওয়া ঋতুপর্ণা শিখেছেন কঠোর পরিশ্রমের মূল্য। তার মতে, জীবনে বড় স্বপ্ন পূরণ করতে হলে পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস অপরিহার্য।
ঋতুপর্ণা চাকমা শুধু একজন ফুটবল খেলোয়াড় নন; তিনি দারিদ্র্যকে জয় করা এবং বাংলাদেশের নারী ফুটবলের এক অনুপ্রেরণামূলক প্রতীক। তার যাত্রা প্রতিটি তরুণ খেলোয়াড়কে শেখায় যে কঠোর পরিশ্রম এবং সংকল্প থাকলে সবকিছুই সম্ভব।