শমী কায়সার একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী অভিনেত্রী, প্রযোজক, এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নব্বইয়ের দশকের টেলিভিশন নাটক থেকে চলচ্চিত্র পর্যন্ত অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি। তার জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। চলুন, তার জীবন ও কর্মজীবনের কিছু অজানা তথ্য এবং রহস্যময় গল্প সম্পর্কে জানি।
বিষয়বস্তু
শৈশব এবং পরিবার
শমী কায়সারের জন্ম ১৫ জানুয়ারি, ১৯৭০ সালে। তার পিতা শহীদুল্লাহ কায়সার একজন বিখ্যাত লেখক এবং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, যাকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপহরণ করে, এবং পরবর্তীতে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার মা পান্না কায়সার একজন প্রখ্যাত লেখিকা এবং সাবেক সংসদ সদস্য। শমীর পরিবারে ছোট ভাই অমিতাভ কায়সারও রয়েছেন। শমীর রাজনৈতিক পরিবারে আরও একটি সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, তিনি রাজনীতিবিদ মাহি বি. চৌধুরীর খালাতো বোন।
অভিনয়ে প্রথম পদক্ষেপ
শমী কায়সারের অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় ১৯৮৯ সালে, যখন পরিচালক আতিকুল হক চৌধুরী একটি নাটকের জন্য একজন নতুন মুখ খুঁজছিলেন। শমী কায়সার “কেবা আপন কেবা পর” নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান এবং এখান থেকেই তার জনপ্রিয়তার শুরু। পরবর্তীতে তিনি “যত দূরে যাই,” “নক্ষত্রের রাত,” এবং “ছোট ছোট ঢেউ” সহ আরও অনেক নাটকে কাজ করেছেন। ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা নাটকের জগৎ ছাড়িয়ে সিনেমাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
চলচ্চিত্রে পদচারণা
শমী কায়সার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “হাছন রাজা” এবং “লালন”। তিনি “দ্য নেম অব এ রিভার” চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন, যা ঋত্বিক ঘটকের জীবনী নিয়ে নির্মিত হয়েছিল।
প্রযোজনা জীবনে সাফল্য
১৯৯৭ সালে শমী তার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধানসিড়ি প্রোডাকশনস প্রতিষ্ঠা করেন, যা “মুক্তি” ও “অন্তরে নিরন্তরে” নামের জনপ্রিয় নাটক প্রযোজনা করে। পরবর্তীতে, তিনি ধানসিড়ি কমিউনিকেশন লিমিটেডের মাধ্যমে একটি রেডিও চ্যানেল “রেডিও অ্যাক্টিভ”-এর জন্য লাইসেন্সও পেয়েছেন।
ব্যক্তিগত এবং বিবাহিত জীবন
শমী কায়সার তিনবার বিয়ে করেছেন। প্রথমে তিনি ভারতীয় নাগরিক অর্নব ব্যানার্জী রিঙ্গোকে বিয়ে করেন, যা দুই বছরের মধ্যে ভেঙে যায়। এরপর ২০০৮ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ আরাফাতকে বিয়ে করেন, তবে এ সম্পর্কও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বর্তমানে তিনি ব্যবসায়ী রেজা আমিন সুমনের সঙ্গে সংসার করছেন।
সমালোচনা ও বিতর্ক
শমী কায়সারের জীবনে বিতর্কও কম নেই। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটাসংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হন। আন্দোলনের সময় শমীসহ কিছু শিল্পী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন, যা পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে।